এই লাইট হাউস পাহারা দিতে আপনাকে বছরে
প্রায় 15 কোটি টাকা দেয়া হবে চাকরিটা
পেতে খুব ইচ্ছা করছে আরো অফুরন্ত সুযোগ
সুবিধা আছে যেমন এখানে থাকবে না কোন বস
আপনি সম্পূর্ণ একা নিজের ইচ্ছামত ঘুমাতে
পারবেন মাছ ধরতে পারবেন যা মন চায় তাই
করতে পারবেন আপনার কাজ থাকবে শুধুমাত্র
দেখা যে এই লাইট হাউজের বাতিটা ঠিকঠাক
ভাবে জ্বলছে কিনা কখনো বন্ধ হয়ে গেলে
আবার অন করে দিবেন ব্যাস এতটুকুই আপনাকে
আর কিছুই করতে হবে না সারাদিন শুধু পায়ের
উপরে পা তুলে ঘুমিয়ে থাকবেন কিন্তু মজার
ব্যাপার হলো এত সুযোগ সুবিধা থাকার পরেও
এটা পৃথিবীর মধ্যে সবচাইতে ভয়ঙ্করতম একটা
কাজ কারণ এই লাইট হাউস ঠিক একদম সমুদ্রের
মাঝে স্থাপন করা হয় এখানে থাকা অবস্থায়
আপনি কারো সাথেই যোগাযোগ করতে পারবেন না
একাকিত্ব আপনাকে সবসময় ঘিরে থাকবে আরো
ভয়ঙ্কর ব্যাপার হলো প্রায় সময়ই এখানে
বেশ বড় বড় ঝড় হয় সেইসব ঝড়ের তান্ডব
এতটাই ভয়ঙ্কর হয় যে মাঝেমধ্যে সমুদ্রের
পানি এসে টাওয়ারের উপরে উপচে পড়ে এমনকি
এই কাজে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে আরো কি
কি মহাবিপদ এখানে পথ পেতে থাকে তা একটু
পরেই জানতে পারবেন এখন হয়তো এসব দেখে
আপনার মাথায় প্রশ্ন আসতে পারে যে এই লাইট
হাউস সমুদ্রের মাঝেই কেন তৈরি করা হয়েছে
এর কাজই বা কি আর কেনই বা এই লাইট হাউসের
উপরে সবসময় নজর রাখতে হয় কেন এর লাইট
কখনো বন্ধ করা যায় না রহস্যময় এই লাইট
হাউজের আদ্যপ্রান্ত জানতে হলে আমাদেরকে
কয়েক বছর পেছনে ফিরে যেতে হবে তখন
যাতায়াতের জন্য না ছিল কোন গাড়ি আর না
ছিল অন্য কোন যানবাহন বা আকাশপথ তাই বিশাল
লম্বা পথ পাড়ি দেওয়ার জন্য একমাত্র
উপায় ছিল পানিপথ সেই সময় ক্যাম্পেড
মারিয়াস নামের একজন অসাধারণ নাবিক ছিলেন
তিনি অনেক প্রতিকূল অবস্থাতেও সমুদ্র
পাড়ি দিতে পারার জন্য বেশ বিখ্যাত ছিলেন
তো একবার তিনি সমুদ্রের মাঝেই ঘুটঘুটে
অন্ধকার একটা জায়গা পাড়ি দিচ্ছিলেন ঠিক
তখনই সমুদ্রের নিচে থাকা কিছু পাথরের সাথে
জাহাজের ধাক্কা লাগে সেই সময় জাহাজগুলো
তৈরি করা হতো কাঠ দিয়ে যার কারণে জাহাজের
নিচে খুব সহজেই ফাটল ধরে যায় আর পানি
ঢুকে বেশ ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয় জাহাজটা
এই দুর্ঘটনার পর ক্যাপ্টেন মার্সিয়াস এর
সমাধান খুঁজতে থাকেন তিনি এমন কিছু তৈরি
করতে চাচ্ছিলেন যে এই ধরনের সমস্যা থেকে
বাঁচানোর জন্য আগে থেকেই জাহাজের
নাবিকদেরকে সাবধান করতে পারবে কিন্তু
এখানে মহা দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়
প্রশান্ত মহাসাগরের বিশালতা কারণ প্রশান্ত
মহাসাগর এতটাই বড় আর বিশাল যে যদি সাতটা
মহাদেশের সমস্ত ভূমি একত্র করা হয় তবুও
প্রশান্ত মহাসাগরের আয়তনই বেশি থাকবে
হাজার হাজার বছর আগে যখন নাবিকেরা এই
বিশাল সমুদ্র পাড়ি দিয়ে যাতায়াত করতো
তখন তাদের সমুদ্রের নিচে থাকা কোন কিছু
সম্পর্কেই কোন ধারণা থাকতো না এমনকি তাদের
সামনে থাকা রাস্তা সম্পর্কেও তাদের কোন
আইডিয়া ছিল না সেই সময় পথ নির্দেশের
জন্য কোন রকম প্রযুক্তি তো ছিলই না যেটা
তাদেরকে রাস্তা চিনতে সাহায্য করতে পারতো
মূলত সেই সময় নাবিকদের সমুদ্র পাড়ি
দেওয়ার জন্য সূর্যের দিকে কিংবা চাঁদ
তারার উপরেই নির্ভর করে চলতে হতো আর এই
দিক নির্দেশনার সমস্যার জন্য চলতি পথে
বাড়তি আরো দুই একটা উটকো ঝামেলা এসে জড়ো
হতো যেমনটা ক্যাপ্টেন এলিসের সাথে হয়েছিল
একবার ক্যাপ্টেন এলিস তার নাবিকদের সাথে
প্রশান্ত মহাসাগর পাড়ি দিচ্ছিলেন তো
একদিন রাতে হঠাৎ করে ঝড় শুরু হয় পুরো
আকাশ ঢেকে যায় কালো মেঘে আকাশ সব তারাও
মেঘের নিচে ঢাকা পড়ে যায় যার কারণে
প্রচন্ড ঝড়ের মধ্যে তারা রাস্তা হারিয়ে
যায় ফলে যখন সকাল হয় তারা দেখতে পায় বিশাল
সমুদ্রের মাঝে তারা হারিয়ে গেছে তাদের
কাছে তখন খাওয়ার জন্য কিছুই ছিল না ছিল
পানি না ছিল কোন খাবার ক্ষুধা আর তৃষ্ণায়
নাবিকদের অবস্থা বেশ খারাপ হয়ে যায় তারা
সমুদ্রের বিশাল পানির মধ্যে থেকেও পানির
অভাবে তৃষ্ণায় কাতর হয়ে গিয়েছিল এমনকি
অনেক নাবিক মারাও গিয়েছিল এরপর অনেক
কষ্টে ক্যাপ্টেন তীরের দেখা পায় এরপরেই
মূলত লাইট হাউস তৈরির যাত্রা শুরু হয়
মিশরের ভূমধ্যসাগরের পাশেই ছিল
আলেকজান্ড্রিয়া সেই সময়ে সেখানকার শাসক
ছিলেন টলেমি দ্যা সেকেন্ড ফিলাডেফিয়া
কিন্তু এই রাজ্যের জন্য সেই সময়ের
সবচাইতে বড় সমস্যা ছিল তাদের অবস্থান বা
লোকেশন আপনি যদি এই ছবিটা একটু ভালো করে
লক্ষ্য করেন তাহলেই বুঝতে পারবেন এই শহরের
মধ্যে প্রবেশের জন্য এই জায়গাটা দিয়েই
যাতায়াত করতে হতো আর এই জায়গাটার
আশেপাশে অনেক বড় বড় পাথর ছিল যার ফলে এই
শহরে বাণিজ্য করতে আসা জাহাজগুলো যখন এই
রাস্তা দিয়ে পার হতো তখন খুব সহজেই
পাথরগুলোর সাথে জাহাজগুলোর ধাক্কা লাগতো
আর এর ফলে কখনো কখনো এসব জাহাজগুলো ডুবে
যেত কিংবা বড় ধরনের কোন ক্ষয়ক্ষতির
সম্মুখীন হতো তাই দিন দিন এই রাজ্যে
বাণিজ্যিক জাহাজ কমে যাওয়ার কারণে
অর্থনৈতিক দিক দিয়ে বেশ পিছিয়ে পড়তে
থাকে টলেমি তখন তার রাজ্যকে রক্ষা করার
জন্য সেই সময়ের সবচাইতে বিখ্যাত
আর্কিটেক্ট সস্টাসাস অফ সিনিডাসের কাছে
ছুটে যান তার কাছে এই সমস্যা থেকে মুক্তির
জন্য প্রার্থনা করেন দুইজন মিলে তখন একটা
আইডিয়া বের করেন পানির উপরে তারা এমন এক
দুর্গ গড়ে তুলবেন যার উপরে থাকা
আলোকরশ্মি সমুদ্রে থাকা জাহাজগুলোকে গাইড
করবে সেই সাথে এটা পানির নিচে থাকা পাথরের
ব্যাপারেও আগে থেকেই সাবধান করতে থাকবে
সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী সস্তাসাস কাজ শুরু
করে দেয় কিন্তু তখনও তিনি ভাবতে পারেননি
যে তিনি যা করতে চলেছেন সেটা একসময় পুরো
পৃথিবীতে অন্যতম একটা সৃষ্টি হয়ে উঠবে যা
পুরো পৃথিবীতে আলেকজান্ড্রিয়ার বাতিঘর
নামে পরিচিত হয়ে উঠবে আলেকজান্ড্রিয়ার
সেই বাতি ঘরের উচ্চতা ছিল 384 ফুট এটা
পুরোটাই বানানো হয়েছিল সাদা মার্বেল পাথর
দিয়ে এই লাইট হাউজের মাথার উপরে সেই সময়
প্রতিনিয়ত আগুন জ্বলতে থাকতো যার জন্য
সবসময় এখানে তেল আর কাঠের জন্য যোগান
দিতে হতো এমনকি এই বাতিঘরকে পরবর্তীতে
পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের একটা হিসেবেও
স্বীকৃতি দেয়া হয় শুধুমাত্র এই উচ্চতার
জন্যই এটা বিখ্যাত ছিল না সেই সাথে ছিল এর
অসাধারণ ডিজাইন মূলত সস্তাসাস সেই সময়
আলোর রশ্মি বা তীব্রতা ছড়িয়ে দেয়ার
জন্য আয়না আর লেন্স দিয়ে একটা ডিজাইন
তৈরি করে যাতে করে এই বাতিঘরের আলো অনেক
দূরে থাকা জাহাজের নাবিকদের পথ দেখাতে
পারে তো সেই সময়টাতে যখন এই বাতিঘর বা
লাইট হাউজের নির্মাণের খবর ছড়িয়ে পড়ে
তখন নাবিকেরা যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে
কারণ এখন আর আলেকজান্ড্রিয়া আসার পথে
তাদের আর পথ ভুল হবে না পাথরের আঘাতে
জাহাজও ভেঙে যাবে না এভাবেই বাতিঘরের
আইডিয়াটা পুরো পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়ে
পড়তে থাকে যদিও প্রথমে এই বাতিঘরের
ব্যবহার সমুদ্রের মাঝে শুধুমাত্র জাহাজ
সাবধানে চলাচলের জন্যই তৈরি করা হতো
কিন্তু সময়ের সাথে সাথে বাণিজ্যিক
জাহাজের সংখ্যা যখন বাড়তে থাকলো তখন
সমুদ্রের যেসব জায়গায় পাথরের উচ্চতা
সমুদ্রের পানির উচ্চতার কাছাকাছি কিংবা
যেখানে অনেক বেশি পাথর থাকে যেগুলোর সাথে
খুব সহজেই জাহাজের ধাক্কা লাগতে পারে সেসব
জায়গাগুলোতেও তখন বাতিঘর বা লাইট হাউস
তৈরি হওয়া শুরু হয় যদিও প্রথম দিকে লাইট
হাউজে সবসময় আগুন জ্বালানো হতো কিন্তু
এটা ঠিক ততটাও ভালো আইডিয়া ছিল না কারণ
এর জন্য সবসময় কয়লা বা জ্বালানি কাঠের
যোগান রাখতে হতো তখন অবশ্য এটা ছাড়া আর
কোন উপায়ও ছিল না এরপর মোমবাতি কিংবা
ল্যাম্পের ব্যবহারও করা হয়েছিল কিন্তু
আগুনের আলোর রশি তো আর খুব বেশিদূর যেতে
পারতো না ঠিক তখনই আবিষ্কার হয় বৈদ্যুতিক
বাল্বের লাইট হাউস গুলোতেও আগুনের
পরিবর্তে বৈদ্যুতিক বাল্ব ব্যবহার করা
শুরু হয় কিন্তু তারপরেও এই আলো খুব
বেশিদূর যেতে পারতো না এর কারণ হলো
লেন্সগুলোকে বাল্বের পেছনে লাগানো হতো তখন
সেই সময়ের বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেন যদি
লেন্সকে সামনে বসানো হয় তাহলে আলো আরো
বেশিদূর পর্যন্ত পৌঁছাতে পারবে কিন্তু সেই
লেন্সগুলোতেও বেশ সমস্যা ছিল কারণ তখনকার
লেন্সগুলো ছিল খুবই মোটা আর ঠিক তখনই
ফ্রান্সের একজন বিজ্ঞানী ফ্রেসনেলফ তার
বিশেষ এক ধরনের লেন্স আবিষ্কার করেন তার
বানানো এই বিশেষ লেন্সের মধ্যে দিয়ে আসা
সমস্ত আলো সরাসরি গিয়ে একটা পয়েন্টে
মিলিত হতো যার ফলে আলো খুব সহজেই
নির্দিষ্ট একটা পয়েন্টে অনেক দূর পর্যন্ত
পাঠানো যেত বর্তমান সময়ে প্রায় সব লাইট
হাউজেই ফ্রেশনেলের সেই লেন্স ব্যবহার করা
হয় লেন্সের এই আবিষ্কার লাইট হাউসকে এক
নতুন রূপ দিয়েছিল যে কারণে এখনো সমুদ্রের
বুকে জাহাজগুলো নিরাপদে যাতায়াত করতে
পারে কি লাইট হাউজের ভয়ঙ্কর এই দিকগুলো
জানার পরে আপনার বুকের ধুকধুকানি আরো
বেড়ে গিয়েছে হ্যাঁ আর এজন্যই কোন
স্বাভাবিক মানুষকে এত পারিশ্রমিক দেওয়ার
পরেও নির্জন এই লাইট হাউসে থাকতে চায় না
কারণ কেউ কখনোই নিজেকে এই ভয়ঙ্কর এবং
নির্জনতার মাঝে হারাতে চায় না।
শেষ কথা:
আমাদের এই mahabishwatvnews.com পত্রিকা ওয়েবসাইটে প্রতিনিয়ত যে নিউজ বা শিক্ষনীয় ব্লগ পোস্ট করা হয় ঠিক তেমনই আজকের এই শিক্ষনীয় আর্টিকেলটি আশাকরি আপনাদের অনেক উপকারে আসছে। 🫣
আর হ্যাঁ আজকের আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধুবান্ধবদের সাথে পোস্টটি শেয়ার করবেন,যাতে তারাও এই শিক্ষণীয় আর্টিকেলটি পরে জানতে পারে যে লাইট হাউসে ১৫ কোটি টাকা বেতন দেওয়া হলেও কেনো কেউ এই চাকারী টা করতে চায় না তা সম্পর্কে জেনে উপকৃত হতে পারে।
আরও পড়ুন-
পৃথিবীর সবচেয়ে বিখ্যাত সেই বক্তব্য 🔥। STEVE JOBS: Stanford Speech in Bangla by mahabishwatvnews
মৃত্যুর যন্ত্রণা কতটা ভয়ংকর? || কুরআন ও বিজ্ঞানের আলোকে জানুন || জানার পর আপনার চিন্তা বদলে যাবে!
প্রচন্ড ব্যথা পায়ের কুনি? এই ১টি সহজ চিকিৎসায় মিলবে আরাম! | মহাবিশ্ব টিভি নিউজ
বেতন ১৫ কোটি ! কিন্তু তারপরও এই চাকরী কেউ করতে চায় না ! শুধুমাত্র একটা লাইটহাউস পাহারা দেয়া !