আত্মবিশ্বাস ছাড়া জীবন এমন এক নৌকা যা
নদীতে ভাসছে কিন্তু দিশাহীন।
লজ্জা আর ভয় নিয়ে যারা চলে তারা জীবনে
কোন বড় কিছু অর্জন করতে পারে না তা আপনি
যতই মেধাবী হন না কেন। তাই নিজের লাজুক
স্বভাবকে দূর করতে আজকের গল্পটি শেষ
পর্যন্ত পড়ুন।
এক সময়ের কথা এক ব্যস্ত শহরে এক
ব্যবসায়ী বাস করতেন যিনি লবণ বিক্রি করে
তার পরিবার চালাতেন। এক স্ত্রী এবং দুই
পুত্র নিয়ে ছিল তার ছোট্ট পরিবার। তার
বড় ছেলে ছিল খুব লাজুক এবং অন্যদের সাথে
কথা বলায় দ্বিধাগ্রস্ত করতো। অন্যদিকে
ছোট ছেলে ছিল খুবই আত্মবিশ্বাসী ও
প্রাণবন্ত।
লোকেরা প্রায়ই বড় ছেলেকে তার চুপচাপ
স্বভাবের জন্য বোকা ভাবতো। অনেকেই তার
সরলরতার সুযোগ মৃত কিন্তু সে কখনো অভিযোগ
করতো না। ব্যবসায়ী লোকটি তার বড় ছেলের
লাজুক আচরণে প্রায়ই হতাশ হতেন এবং তাকে
মাঝেমধ্যে কঠোরভাবে বকা করতেন। এতে বড়
ছেলের আত্মবিশ্বাস আরো ভেঙে পড়তো। বড়
ছেলে যখন বড় হতে লাগল তার আত্মবিশ্বাসের
অভাব তার পড়াশোনাতেও প্রভাব ফেলতে শুরু
করল। পরীক্ষায় ভয়ে সে সঠিকভাবে উত্তর
লিখতে পারতো না ফলে পড়াশোনায় পিছিয়ে
পড়তো।
শেষ পর্যন্ত যখন সে যুবক হলো তখন তার বাবা
তাকে বড় ছেলে হওয়ায় পারিবারিক ব্যবসায়
সাহায্য করতে বললেন। বাবাকে হতাশ না করার
ভয়ে সে রাজি হলো কিন্তু তার নার্ভাসনেসের
কারণে প্রায়ই ধুল করতো। ঠিকমত কাস্টমারের
সাথে কথা বলতে পারতো না। ফলে তার বাবা আরো
রেগে যেত। একদিন যখন সেই ব্যবসায়ী বাইরে
ছিল তখন কিছু ধূর্ত লোক দোকানে এসে মিথ্যা
বলল যে তোমার বাবা আমাদের পাঠিয়েছেন
শহরের সব লবণের বস্তা নিয়ে যেতে। যুবকটি
তাদের পাল্টা প্রশ্ন করতে দ্বিধা করল এবং
কিছু বুঝে ওঠার আগেই তারা সমস্ত মাল নিয়ে
চলে গেল। রাতে যখন তার বাবা ফিরে এসে দেখে
দোকান খালি তখন তিনি রাগে ক্ষিপ্ত হয়ে
চিৎকার করলেন অপদার্থ তুই আমার সবকিছু
লুটিয়ে দিয়েছিস। তুই এখনই আমার চোখের
সামনে থেকে চলে যা। আর কখনো ফিরে আসবি না।
বাবার করা কথায় যুবকটি ভীষণভাবে ধে পড়ল।
বাবার রাগ। এলাকার লোকের হাসাহাসি আর
নিজের অসহায়তা তাকে একেবারে মূল্যহীন মনে
করালো। হৃদয় ভাঙ্গা যুবকটি নদীর পাড়ে
গিয়ে দাঁড়ালো। লজ্জায় তার বুক ফেতে
যাচ্ছিল। সে ভাবল, এ জীবনে আর কোন মানে
নেই। আমি চিরকাল ব্যর্থই থেকে যাব। এসব
ভাবতে ভাবতে ঠিক যখন সে নদীতে ঝাঁপ দিতে
যাচ্ছিল তখনই এক বৃদ্ধ লোক তাকে দেখতে
পেয়ে তার হাত কেনে ধরে তাকে নিরাপদে
ফিরিয়ে আনল। যুবকটি রেগে বলল, আপনি কেন
আমাকে বাঁচালেন? আমার জীবন নিরর্থক। আমি
কিছুই ঠিকমত করতে পারি না। বৃদ্ধটি তখন
মৃদুস্বরে বলল, বাঁচা জীবন বড়ই মূল্যবান।
খোদা এইটা একবারই আমাদেরকে দেন। বেঁচে
থাকলে তুমি তোমার ব্যর্থতাকে জয় করে
সাফল্য অর্জন করাতে পারবে। কিন্তু যদি হার
মানো তাহলে কখনো জানতেই পারবে না তুমি
আসলে কি করতে পারতে। যুবকটি দুঃখ প্রকাশ
করে বলল, আমি খুব লাজুক আর দুর্বল। এজন্য
আমার বাবাও আমাকে ঘৃণা করেন। আমার তেমন
কোন পড়াশোনাও নেই। তাই সবাই আমাকে বোকা
বলে ডাকে। আমার মত একজনের বেঁচে থাকার কোন
অধিকার আছে কি? সব শুনে বৃদ্ধ লোকটি একটু
গম্ভীর হয়ে বললেন, আমার সাথে আমার বাসায়
চলো। এটা বলেই তিনি হাঁটতে লাগলেন। যুবকটি
কিছু বুঝতে না পেরে তার পিছু পিছু তার
বাসায় গেল। বাসায় এসে জ্ঞানী বৃদ্ধ
বললেন, তোমার প্রশ্নের উত্তর আমার কাছে
আছে। কিন্তু তার আগে আমাকে তিনদিন অনুসরণ
করতে হবে। যদি তুমি আমার তিনটি কাজ
সম্পন্ন করো আমি তোমার জীবনে পরিবর্তন এনে
দেব। আসার আলো দেখতে পেয়ে যুবক রাজি হয়ে
গেল। প্রথমদিন বৃদ্ধ বললেন আজ তুমি 10 জন
অচেনা মানুষের সাথে কথা বলবে তাদের জীবন
সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবে এবং তাদের কথা লিখে
রাখবে। ছেলেটি সংকোচে থাকলেও কাজে নেমে
পড়ে। কেউ কেউ তাকে উপেক্ষা করলেও সে
ধৈর্য ধরে চেষ্টা চালিয়ে যায়। সন্ধ্যা
নাত সে 10 জনের সাথে কথা বলে এবং কয়েকজন
নতুন বন্ধু উপায়। দ্বিতীয় দিন বৃদ্ধ
বললেন আজ তুমি 10 জন শিশুদের সামনে পানি
কেন গুরুত্বপূর্ণ তা শেখাবে। ছেলেটি চমকে
উঠে বলল আমি তো ঠিকভাবে পড়াশোনা করিনি।
আমি কিভাবে শেখাবো? বৃদ্ধ হেসে বললেন তারা
তো জানে না তুমি অশিক্ষিত। তুমি যা জানো
সেটাই ওদের বলবে।
নারভাস হাতে একটি গ্লাস নিয়ে সে শিশুদের
সামনে দাঁড়ায় এবং তাদের পাঁচটি পানির
উপকারিতা বলে দ্রুতই সরে আসে। কিন্তু সে
নিজেই অবাক হয় যে সে কাজটি করতে পেরেছে।
পরেরবার সে আরেকবার চেষ্টা করে এবং আগের
চেয়ে আরো আত্মবিশ্বাসের সাথে বোঝাতে
পারে। এরপর সে বুঝতে পারে ভয় কেটে গেছে।
তৃতীয় দিন বৃদ্ধ বললেন এবার তোমাকে তোমার
বাবার কাছে ফিরে গিয়ে ক্ষমা চাইতে হবে।
ছেলেটি ভয় পেয়ে বলল, না বাবা কখনো আমাকে
ক্ষমা করবেন না। বৃদ্ধ বললেন, যদি তুমি
এটা না করো, আমি তোমাকে শেষ উপদেশটা দেবো
না। সব সাহস একত্র করে ছেলেটি বাড়ি ফিরে
যায়। নম্রভাবে বাবার কাছে ক্ষমা চায় এবং
প্রমাণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়।
ছেলের পরিবর্তন দেখে বাবা তাকে আবার
ব্যবসায় সুযোগ দেন। ছেলেটি বৃদ্ধের কাছে
ফিরে এসে বলল, এখন আমাকে বলুন সফলতার গোপন
রহস্য কি? জ্ঞানী বৃদ্ধ হেসে বললেন, তুমি
নিজেই তা আবিষ্কার করে ফেলেছো। তোমার
সবচেয়ে বড় শত্রু তোমার লাজুকতা ছিল না
ছিল তোমার ভয়। মানুষ তোমাকে সেইভাবেই
দেখে যেমনভাবে তুমি নিজেকে উপস্থাপন করো।
তুমি যদি নিজেকে আত্মবিশ্বাসী দেখাও কেউ
তোমাকে দুর্বল ভাববে না। সত্যিকারের শক্তি
আসে আত্মবিশ্বাস থেকে। চোখে কৃতজ্ঞতার
অস্ত্র নিয়ে ছেলেটি মাথা নত করে বলল, আমি
বুঝতে পেরেছি। এবার আমি আর ভয়কে জয়ী হতে
দেবো না। বছর কয়েক পর সেই লাজুক ছেলেটি
হয়ে উঠলো এক প্রখ্যাত ব্যবসায়ী যে কিনা
তার বুদ্ধিমত্তা ও আত্মবিশ্বাসের জন্য
পরিচিত হয়ে গেছিল।
মনে রাখবেন আত্মবিশ্বাস জন্মগত নয়। এটা
সময়ের সাথে গড়ে তুলতে হয়। যে কেউ যত
লাজুকই হোক যদি নিজেকে বিশ্বাস করে তবে
সেই শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে। ভয় ও
সন্দেহ আমাদের আটকে রাখে আর সাহস ও
অধ্যবসায় আমাদের বদলে দিতে পারে। ছেলেটি
ভেবেছিল সে ব্যর্থতার জন্যই জন্মেছে।
কিন্তু যখনই সে ভয়কে মোকাবেলা করল তখনই
তার জীবন বদলে গেল। আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়
তখনই যখন আমরা কমফর্ট জোন থেকে বের হই।
পৃথিবী আমাদের সেই রূপেই দেখে যেভাবে আমরা
নিজেকে তুলে ধরি। নিজেকে বিশ্বাস করুন ছোট
ছোট পদক্ষেপে এগিয়ে চলুন। আপনি নিজের
মধ্যে দেখবেন এমন শক্তি খুঁজে পাবেন এমন
এক সাহস যা আগেই কখনো টের পাননি।
গল্পটি ভালো লাগলে একটি লাইক ও কমেন্ট করে
আমার পত্রিকা ওয়েবসাইটটিকে সাবস্ক্রাইব করে রাখুন। যাতে এটি আরো মানুষ জানতে পারে। আমি
আবারও আসবো এমনিই আরেকটি শিক্ষামূলক গল্প
নিয়ে। ততদিন ধৈর্য ধরুন। কৃতজ্ঞ থাকুন
এবং জীবনে এগিয়ে যান।
শেষকথা:
আমাদের এই mahabishwatvnews.com পত্রিকা ওয়েবসাইটে প্রতিনিয়ত যে নিউজ বা শিক্ষনীয় ব্লগ পোস্ট করা হয় ঠিক তেমনই আজকের এই শিক্ষনীয় আর্টিকেলটি আশাকরি আপনাদের অনেক উপকারে আসছে। 🫣
আর হ্যাঁ আজকের আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধুবান্ধবদের সাথে পোস্টটি শেয়ার করবেন,যাতে তারাও এই এই শিক্ষণীয় আর্টিকেলটি পরে ভয় কাটিয়ে জীবনে সফল হওয়ার উপায় সম্পর্কে এই মোটিভেশনাল কাহিনীটি জেনে উপকৃত হতে পারে।
আরও পড়ুন-
পৃথিবীর সবচেয়ে বিখ্যাত সেই বক্তব্য 🔥। STEVE JOBS: Stanford Speech in Bangla by mahabishwatvnews
মৃত্যুর যন্ত্রণা কতটা ভয়ংকর? || কুরআন ও বিজ্ঞানের আলোকে জানুন || জানার পর আপনার চিন্তা বদলে যাবে!
প্রচন্ড ব্যথা পায়ের কুনি? এই ১টি সহজ চিকিৎসায় মিলবে আরাম! | মহাবিশ্ব টিভি নিউজ
বেতন ১৫ কোটি ! কিন্তু তারপরও এই চাকরী কেউ করতে চায় না ! শুধুমাত্র একটা লাইটহাউস পাহারা দেয়া !